সিএনএমঃ
কেরাণীগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি পলাতক স্বামী ও ফরিদপুরে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামিকে মাদারীপুর জেলার সদর এলাকা ও ঢাকা জেলার দোহার এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
গতকাল (২৯ আগস্ট) আনুমানিক রাত ২২:০৫ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং র্যাব-০৮ এর সহযোগীতায় মাদারীপুর জেলার সদর থানাধীন পুরান বাজার এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হত্যাকারী ভিকটিমের স্বামী জীবন শেখ (২৩), পিতা-রিপন শেখ, সাং-সাতপাড়া, থানা-গোপালগঞ্জ সদর, জেলা-গোপালগঞ্জ, বর্তমান ঠিকানা-হাবিব নগর, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামি জীবন শেখ এর সাথে ভিকটিম নাবিলা খান এর ০১ বছর ০৬ মাস পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকার জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাবিব নগর এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনে জিহাদ (০৮ মাস) একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে জীবন শেখ ব্যবসা করার জন্য ভিকটিম নাবিলাকে তার পরিবারের নিকট হতে যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। পরবর্তীতে নাবিলা বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জীবন শেখ’কে ব্যবসা করার জন্য ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করা হয়। তার কয়েকদিন পর জীবন শেখ পুনরায় ভিকটিম নাবিলাকে তার পরিবারের নিকট হতে টাকা নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন প্রকার চাপ প্রয়োগ করে। অতঃপর নাবিলা তার পরিবারের নিকট হতে পুনরায় কোন টাকা আনতে পারবেনা জানালে এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। যার ফলে আসামি জীবন শেখ ও ভিকটিম নাবিলার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ হতো এবং জীবন শেখ ভিকটিম নাবিলা’কে মারধরও করত বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে গত ২৬/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক সকাল ০৮:০০ ঘটিকায় উক্ত যৌতুকের টাকা নিয়ে পুনরায় তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে জীবন শেখ নাবিলা’কে মারধর ও বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। মারধর করার এক পর্যায় জীবন শেখ নাবিলার গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে এবং ভিকটিম নাবিলার লাশ ঘরের মধ্যে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ট স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
উক্ত হত্যাকান্ডের পর মৃত নাবিলার খান এর পিতা মোঃ টুটুল হোসেন খান (৪৫) বাদি হয়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৮৭, তারিখ-২৭/০৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত-২০২০) এর ১১(ক)/৩০।
এছাড়া গতকাল ২৯ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাতে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন কার্তিকপুর এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে ফরিদপুর জেলার সদরপুরে আলোচিত মানসিক প্রতিবন্ধী নাবালিকা ধর্ষণ মামলার একমাত্র পলাতক আসামি সিদ্দিক খা (২০), পিতা-লিয়াকত ওরফে রেকাত খা, সাং-মধ্যের বাবুরচর, থানা-সদরপুর, জেলা-ফরিদপুর’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার সত্যতা স্বীকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গত ২৪/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৭:০০ ঘটিকায় ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন মধ্যের বাবুরচর এলাকায় বসবাসরত ১৩ বছরের মানসিক প্রতিবন্ধী এক শিশু তাদের বাড়ীর পিছনে নসিমনে বসে খেলা করাকালে একই এলাকায় বসবাসরত সিদ্দিক উক্ত মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে ইশারায় তার কাছে ডেকে নিয়ে যায়। অতঃপর প্রতিবন্ধী শিশুটিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে নিকটস্থ একটি ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করে এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিম ঘটনাটি তার মাকে জানালে ভিকটিমের মা বাদি হয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় ধর্ষক সিদ্দিক খা এর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৭, তারিখ-২৫/৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১)। মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে আসামি সিদ্দিক ঢাকার দোহারসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।