কুমিল্লা শহরের প্ল্যানেট এসআর মার্কেট ও ময়নামতি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ২০০টি দোকানের মধ্যে কোনোটিরই ভ্যাট নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। সরকারের কোষাগারে ভ্যাট জমা দেওয়ার প্রমাণও পায়নি ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল গতকাল (১৭ জানুয়ারি) কুমিল্লা শহরের ২টি মার্কেট জরিপ সম্পন্ন করে। এই জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্কেট দুটিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি; তারা ভ্যাটও দেয় না। ইতোমধ্যে মার্কেট দুটোতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহ মূসক নিবন্ধন গ্রহণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে
তিনি বলেন, আমাদের জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এনবিআরের নিকট মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। একই সঙ্গে যথানিয়মে ও সঠিক পরিমাণ ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি করা।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল ১৭ জানুয়ারি কুমিল্লা শহরের ২টি মার্কেটে জরিপ সম্পন্ন করে। কুমিল্লায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন এবং সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে আসে। এ জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্কেট দুটিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি; তারা ভ্যাটও দেয় না।
মার্কেট দুটি হলো; কুমিল্লা শহরের কেন্দ্রস্থল টাউন হলের কান্দিরপাড়ে অবস্থিত প্ল্যানেট এসআর মার্কেট এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট গেটের সম্মুখে অবস্থিত ময়নামতি সুপার মার্কেট।
এর মধ্যে কুমিল্লার প্ল্যানেট এসআর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোট ৮০টি দোকান রয়েছে। যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে ৫৬টি দোকান খোলা পাওয়া যায়। এগুলোর কোনোটিতে ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দেখা যায় মার্কেটের কোনো প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মার্কেটটি চালু হয়।
অন্যদিকে ময়নামতি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে মার্কেটটির মোট ১২০টি দোকানের মধ্যে ৬৪টি দোকান খোলা পাওয়া যায়। যার কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫-৩১ মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের ৪টি জরিপ দল মাঠে নেমে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের মার্কেটগুলোতে জরিপ করে। জরিপ পরবর্তীতে সারাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণে ব্যাপকভাবে সাড়া পাওয়া যায়।
এছাড়া একই দিনে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অবস্থিত মূল ‘মাতৃভান্ডার’ এ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি। ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃক দুজন কর্মকর্তা বিক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্য সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিক্রির সময় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখতে পেলেও গড়ে ২০-২২টি চালান কাটে। অভিযানকালে জব্দকৃত চলতি বছরের ১৬ দিনের কাগজ যাচাই-বাছাই শেষে ৪ লাখ টাকার বিক্রয় গোপন করার প্রমাণ পায় গোয়েন্দা টিম। এছাড়া ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি কুমিল্লার বনফুল অ্যান্ড কোং এবং কিষোয়ান স্নাকসের কুমিল্লা শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।