মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নগরজোয়ার এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের আগেই ভেঙে পড়ে। ২ বছর আগে ভেঙে পড়লেও সেটি সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সেতুর অ্যাপ্রোচের মাটি বর্ষার পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ায় দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত। এতে সেতুটি ব্যবহার করতে পারছে না তিন উপজেলার মানুষ।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল পদ্মাঘাট থেকে শুরু হয়ে চরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা। ওই রাস্তা পাশের জেলা শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে। রাস্তার ৪ কিলোমিটার অংশে বিছানো রয়েছে ইট, বাকি অংশ এখনো কাঁচা। ওই রাস্তার মাঝে নগরজোয়ার এলাকায় খালের ওপরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতুটি।
সেতিটি দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাড়াও শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার মানুষ মুন্সিগঞ্জ হয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। শরীয়তপুর জেলার বাবুরচর, চিডারচর, নওপাড়া, জয়বাংলা বাজার এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তটি দিয়ে ডাইনগাঁও, আটিগাঁও, নগরজোয়ার, হাসাইল, বানারী, পাচনখোলা, মান্দ্রাসহ প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকে।ফলে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের ২০টি গ্রামের মানুষের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে সরু সেতু নির্মাণ করায় বন্যার পানির স্রোতে ধসে গেছে সেটি। আর ২০২০ সালে ভরা বর্ষায় সেতুটি ধসে যাওয়ার পর সেতুর নিচ দিয়ে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেতুর দুই পাশের রাস্তা ভেঙে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেতুর পাশের রাস্তা ব্যবহার না করতে পেরে পাশের জমি দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষজন। এতে জমির মালিকদের গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে তাদের। তাই সেতুটি তাদের জন্য উল্টো দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণের পরপরই বন্যার পানিতে সেতুটিতে ভাঙন ধরে। ধীরে ধীরে অ্যাপ্রোচ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে সেতুর পাশ দিয়ে জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষাকালে তা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের সময় সেতুটিতে চরের বালু মিশ্রিত মাটি ব্যবহার করা হয়। আমরা সে সময় বাধা দিলেও ঠিকাদার অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি। ফলে নিম্নমানের বালু নিয়ে সেতু নির্মাণ করে। নির্মাণের পরে উদ্বোধন না করতেই সেতুটি কাত হয়ে গেল। দুই বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে সেতুর পাশ দিয়ে নৌকায় চলাচল করতে হয়। সব সময় নৌকা পাওয়াও যায় না। মাঝে-মধ্যে সাঁতরে পার হতে হয়।
স্থানীয় নগরজোয়ার গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ বেপারী (৬৫) বলেন, চার কিলোমিটার হেঁটে বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সেতুটি ঠিক করলে আমরা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারতাম।
চরাঞ্চলের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা বানারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ইভা বলেন, আমরা চর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাই। সেতু বানানোর ২ মাস না হতেই ভেঙে গেছে। সেতু হলে আমরা গাড়ি দিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতে পারতাম।
ওই সড়কের বাইক রাইডার পারভেজ সর্দার বলেন, সেতু আছে কিন্তু সেতু দিয়ে আমরা এক দিনও গাড়ি চালাতে পারিনি। এখন সেতুর পাশের জমির ওপর দিয়ে বাইক চালাই। অনেক সময় জমির ওপরের গর্ত দিয়ে বাইক চালাতে গিয়ে আমাদের হাত-পা ভেঙে যায়। আমরা চাই দ্রুত সেতুটি ঠিক করা হোক।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেদা রহমান জানান, আমি এখন এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। সেতুটি তৈরির সময় আমি এখানে ছিলাম না। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যয় আমার জানা নেই। তবে আমরা জানা মতে, ওই সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেতুটি ভাঙার কারণে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। আমি এখানে যোগদানের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেতুটি সম্পর্কে জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো তার কোনো উত্তর পাইনি।