টিভিতে সংবাদ পাঠের সরাসরি অনুষ্ঠান চলার সময় ক্যামেরার সামনে যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানো সেই রুশ নারী সাংবাদিক মারিনা ওভসায়ানিকোভা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার চ্যানেল ওয়ান’র এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
একইসঙ্গে নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ফ্রান্সের একটি প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
টানা ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিক্ষোভ করছেন রুশ নাগরিকরাও। বিপুল সংখ্যক রুশ বিক্ষোভকারীকে আটক করেও এই প্রতিবাদ দমানো যায়নি। আর এর মধ্যেই ব্যতিক্রমী ও সাহসী প্রতিবাদ করে আলোনায় আসেন রাশিয়ার একটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত নারী সাংবাদিক মারিনা ওভসায়ানিকোভা।
চ্যানেল ওয়ান নামে ওই রুশ টিভি চ্যানেলে খবর পড়ার মধ্যেই ক্যামেরার সামনে যুদ্ধের প্রতিবাদ করেন তিনি। চ্যানেলটিতে সেসময় সংবাদ পাঠের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। সংবাদ পাঠের সময় উপস্থাপকের পেছনে হঠাৎ প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান মারিনা। সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, ‘কোনো যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ বন্ধ করুন, প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস করবেন না, তারা এখানে আপনাকে মিথ্যা বলছে।’
এই ঘটনার পর মারিনা ওভসায়ানিকোভাকে প্রথমে পুলিশ হেফাজতে এবং পরে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে ‘আনঅথরাইজড পাবলিক ইভেন্ট’ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয় এবং পরে মস্কোর একটি আদালত মারিনাকে ৩০ হাজার রুবল (২৮০ মার্কিন ডলার) জরিমানা করেন।
এই ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে মারিনা হয়তো আবারও সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করতে পারতেন। তবে সেদিকে না গিয়ে চাকরি ছেড়ে দিলেন তিনি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪’কে মারিনা ওভসায়ানিকোভা বলেন, তিনি চ্যানেল ওয়ান থেকে তার পদত্যাগের জন্য ‘সকল নথি হস্তান্তর করেছেন’। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া।
মারিনার দু’টি ছোট সন্তান রয়েছে। ফ্রান্স ২৪’কে তিনি বলেন, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের কারণে তার পরিবার বিশেষ করে তার ছেলে উদ্বিগ্ন। তার ভাষায়, ‘কিন্তু (এরপরও) আমাদের এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে যাতে এটি পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়। আমি আশা করি, আমার ছেলে যখন আরও বড় হবে তখন সে বুঝতে পারবে কেন আমি এটি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, তার কয়েকজন সহকর্মী ইতোমধ্যেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেকেই আবার চাকরি ছাড়তে চাননি।
মারিনার দাবি, ‘আমি খুশি যে, (যুদ্ধের প্রতিবাদ হিসেবে) মানুষ চাকরি ছাড়ার নোটিশ দিচ্ছে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব কঠিন এবং অনেকের জন্যই তাদের কাজ বন্ধ করা খুব কঠিন হবে বলে মনে করি।’
জার্মানির ডের স্পিগেলের সাথে পৃথক এক সাক্ষাৎকারে মারিনা ওভসায়ানিকোভা বলেন, তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দেওয়া আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না এবং রাশিয়াতেই বসবাস করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। আমি একজন দেশপ্রেমিক, আমার ছেলে আরও বেশি। আমরা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে চাই না, কোথাও যেতে চাই না।’