নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নামে নকল সনদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। রোববার এই চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রটি প্রথমে ডোমেইন-হোস্টিং কিনে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আদলে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয় যে মার্চেন্ট শিপের চাকরিতে আগ্রহী নাবিকদের বিভিন্ন যোগ্যতা সনদ দেওয়া হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে নাবিকরা তাদের কাছে বিভিন্ন সনদের জন্য যায়। পরে চক্রটি ৩-৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নাবিকদের কাছে বিভিন্ন পেশাগত নকল সনদ বিক্রি করে। এভাবে চক্রটি নকল সনদ বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
চক্রটি থেকে এসব সনদ নিয়ে নাবিকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শীপ কোম্পানি চাকরি করতে গেলে, এসব সনদ নকল তখন ধরা পরে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে বিভিন্ন অভিযোগের মাধ্যমে। পরে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) জানায়।
অভিযোগ পাওয়া পর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে এই চক্রের বেশ কয়েক জন সদস্যকে শনাক্ত করে সিআইডি। পরে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর উত্তরাখানে অবস্থিত ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টা. মেরিটাইমের এমডি সিরাজুল আজাদসহ এই প্রতারণা চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টা. মেরিটাইম একাডেমির ডিরেক্টর মঞ্জুরুল আজাদ (৩২), ডিরেক্টর তারিকুল আজাদ (৩০), আইটি অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩০) ও প্রাক্তন আইটি অফিসার মোহাম্মদ সোহেল রানা (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, দুটি এইচডিডি হার্ডডিস্ক, ২টি এসএসডি হার্ডডিস্ক, একটি পেনড্রাইভ, ৬টি মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, আমাদের কাছে প্রথমে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে অভিযোগ আসে একটি প্রতারক চক্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে যোগ্যতা সনদ যাচাই-বাছাই ও দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছেন। এতে এসব নকল সনদের কারণে বহির্বিশ্বে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করছে।
তিনি বলেন, পরে আমরা তদন্ত করে দেখি, সমুদ্রগামী জাহাজের কর্মকর্তা, নাবিকদের যোগ্যতা সনদ পরীক্ষা পরিচালনা গ্রহণ ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। এছাড়া অধিদপ্তর যে সব সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন, তা হচ্ছে সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) ও সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্স (সিওসি)। যোগ্যতা সনদ নামে এ প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত নাবিক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে, যা তাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইটতে সব সময় আপলোড থাকে।
তিনি আরও বলেন, চক্রটির সদস্যরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখে তারা একই রকম আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিভিন্ন পেশাগত সনদের কপি তারা ডাউনলোড করে।
পরে চক্রটির সদস্য ওয়েব ডেভেলপার ও ডিজাইনার সোহেল রানার মাধ্যমে তারা সরকারি সনদের হুবহু জালিয়াতি কপি তৈরি করে। পরে এসব নকল সনদ তারা জাহাজে চাকরি প্রত্যাশী নাবিকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে।
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাছ থেকে ফেইক ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের বিভিন্ন ডাটাবেস সার্ভারে ইন্সটল করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেখানে সিওপি নম্বর সম্বলিত ১২০ এর অধিক সার্টিফিকেটের তথ্য বিভিন্ন সময়ে আপলোড করা হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত ১২০টি সিওপি সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে।
গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।