করোনা মহামারি শুরুর আগের বছর, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে মারা গেছেন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। ওই বছর এইডস ও ম্যালেরিয়ায় যত লোকের মৃত্যু হয়েছিল, এই সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।
বিশ্বের ২০৪ দেশের ২০১৯ সালের রোগ-সংক্রমণে মৃত্যু বিষয়ক রেকর্ড পর্যালোচনার মাধ্যমে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিতও হয়েছে এই প্রতিবেদন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে জীবাণু সংক্রমণজনিত অসুস্থতায় বিশ্বের ২০৪টি দেশে মারা গেছেন ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ; আর তাদের মধ্যে ১২ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য সরাসারি দায়ী এমআরএসএ, ই. কোলিসহ আরও বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া- যেগুলো ইতোমধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, বাজারের প্রচলিত ওষুধসমূহ এসব ব্যাকটেরিয়ার জন্য আর বিপজ্জনক নয়।
যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য গবেষকরা ইতোমধ্যে এসব ব্যাকটেরিয়াকে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল রেসিস্টেন্স (এএমআর) ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ক্যাটাগরিভুক্ত করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষণা প্রতিবেদেন বলা হয়, ২০১৯ সালে এএমআর ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত মৃতদের মধ্যে একটি বড় অংশ নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের মৃদু সংক্রমণ জনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এছাড়া রক্তপ্রবাহজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, যার ফলে শেষ পর্যন্ত রক্ত ও দেহের অন্যান্য অংশে পচন ধরে- এমন সব রোগেও মারা গেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ।
অন্যদিকে একই বছর, ২০১৯ সালে বিশ্বে অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোমে (এইডস) মারা গেছেন ৮ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এবং ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার মানুষের। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে এএমআর সংক্রমণ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে করোনা মহামারির পাশাপাশি এএমআর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বিস্তার পেতে পারে।
গবেষণার স্বার্থে ২০১৯ সালে ২০৪টি দেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের রেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করেছে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন। সেখানে দেখা গেছে, আফ্রিকার সাব-সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশসমূহে এএমআর জনিত সংক্রমণে মৃত্যুহার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় বেশি। ২০১৯ সালে সাব-সাহারা ও দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে প্রতি ১ লাখ মৃতের মধ্যে এএমআর সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪, অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এই সংখ্যা প্রতি ১ লাখে ১৩ জন।
গবেষণা প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে আরও বলা হয়, এএমআর সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। ২০১৯ সালে যে ১২ লক্ষাধিক এই সংক্রমণে মারা গেছেন, তাদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনই শিশু।
গবেষণা প্রতিবেদনের এক জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাজারে প্রচলিত অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অতি ব্যবহারের কারণেই উদ্ভব ঘটেছে এই এএমআর ব্যাকটেরিয়ার। এসব ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিহত করতে হলে প্রয়োজন নতুন ধরনের ওষুধ এবং জরুরিভিত্তিতে এই খাতে বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের হেলথ ম্যাট্রিক্স ও ইভ্যালুয়েশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাক ক্রিস মুরায় বিবিসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যদি জরুরি ভিত্তি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ব জুড়ে আর একটি বিপর্যয় দেখতে পাব এবং সেটি বর্তমান করোনা মহামারির চেয়ে কোনো অংশেই কম হবে না।’
সূত্র: বিবিসি