সিএনএম২৪ডটকমঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় বিএনপি’র নেতৃত্ব শূন্যতার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সমর্থন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যার প্রতিফলন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি’র আজকে সেই দশা। তারা যত বক্তৃতা দিক আর যত কথাই বলুক না কেন তাদের নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী যখন একটা দলের নেতা তখন তাদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ^াস কিছুই থাকে না। সেই বিশ^াস ও আস্থা এখন আর তাদের প্রতি জনগণের নেই। আস্তে আস্তে সেই জায়গাটা সরে গেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যেহেতু সেবা পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে কাজেই স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ^াস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিশেনে সভাপতিত্বে করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক কথা, আমাদের দুর্ভাগ্য ও হাসি পায় যে, যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ, যারা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সময়, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের নেতাকে কারাবরণ করতে হয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলা রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বিরোধী দলের নেতাকে হত্যার প্রচেষ্টার মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা যদি জনগণের নেতৃত্বে থাকে তবে সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে।
তিনি বলেন, মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে। এখন ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট হচ্ছে যেখানে কারচুপি করার কোন সুযোগ নাই। যার যার ভোট সে নিজে দিতে পারে।
অতীতের নির্বাচনকালীন প্রহসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা’-সেদিন আর এখন নেই বা ভোট বন্ধ থাকলেও একজনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো-সেদিনও নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, মেয়র নির্বাচনে কমিশনারদের মধ্যে কখনো কখনো গোলমাল হয়, সেটা আলাদা।
অতীতের নির্বাচনগুলো কেমন ছিল সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের গায়ে হাজারো কাদার ছিটা তারা আবার বড় কথা বলে কোন মুখে? সেটাই আমার প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, আজকাল অনেক কথা এবং অনেক সমালোচনা শুনি, অনেক প্রশ্ন বিএনপি নেতারা করেন। হ্যাঁ প্রশ্ন করেন, সমালোচনা করেন কিন্তু জানি না তারা আয়নায় নিজেদের চেহারাটা ভালভাবে দেখেন কি না।
খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মেকআপের জন্য চেহারা আয়নায় দেখলেও নিজেদের কাজটাকে তারা দেখেন না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এত কথা অথচ এরকম একটা কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করলাম। সেটার প্রশংসা তো করতেই পারলো না। উল্টো বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে কেউ উঠবেন না। তিনি বলেন, তাহলে নদীটা পার হবে কিসে? যদি নৌপথে যেতে হয় তাহলে নৌকায় যেতে হবে। উপায় তো নেই। নৌকায় চড়তে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধে নেই। সবাইকে নেব, তবে দেখে নেব, কেউ আবার নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে।’
এ অধিবেশনটি প্রত্যক্ষ করতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদ ভবনে আসেন এবং অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন বলেও স্পিকার জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে আমরা ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সঙ্গে প্রণোদনা তো ছিলই। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আমরা অগ্রিম টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং দিয়েছি। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ শুনেছি। এখন তো ভ্যাকসিন এসেছে। ভ্যাকসিন নিজেই সেসবের উত্তর দিয়েছে।
তিনি বলেন, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর খারাপ কোনো রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম কারা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন সেটাও আমরা ঠিক করে ফেলেছি। করোনার ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছেন তাদের এখনও মাস্ক পরে থাকতে হবে, সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বিশ^ ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে একদা রেলশ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে কর্মচ্যূতি ঘটিয়ে রেল বন্ধের উদ্যোগের বিরুদ্ধে তিনি সরকারের এসেই নতুন নতুন রেল স্টেশন স্থাপন, রেলের নতুন ইঞ্জিন ও ক্যারেজ ক্রয়েয় মাধ্যমে রেল পুনরুজ্জীবিত করার পদক্ষেপ তুলে ধরেন ।
পাশাপাশি, সরকার সারাদেশে যোগাযোগের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে ৪শ ২৮টি রেলসেতু নির্মাণ এবং ৪৯১ কি.মি. রেললাইন নির্মাণ করেছে এবং ১ হাজার ১শ’৮১ কি.মি. রেলপথ সংস্কার করা হয়েছে, বলেন তিনি।
’৯৬ সালে সরকারের আসার পরই যমুনা সেতুতে রেল এবং বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিস যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার একে মাল্টিপারপাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যমুনা সেতুতে রেললাইন স্থাপনে বিশ^ব্যাংক বাধা দিলেও আমি বলেছিলাম এটা করবোই। আর এখন রেলই সবথেকে ভায়াবল প্রমাণিত হওয়ায় পৃথক রেল সেতুও আমরা নির্মাণ করছি।’
ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনাকারিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে আপনারা যদি মুন্সিগঞ্জে সেতুর পার পর্যন্ত যান তাহলেই দেখবেন রাস্তাটা কি রকম করেছি। এটা আদৌ বাংলাদেশ বলে মনে হবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে এবং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রচেষ্টা থাকলে যে উন্নয়নটা করা যায় সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন ঘটলে স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে উল্লেখ করে বলেন,‘শতভাগই পাশ করানো হয়েছে কিন্তু তারা যখন শিক্ষা নেবে তখনই কে টিকবে আর কে টিকবেনা সেটা যাচাই করা যাবে। আর স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারায় শিক্ষার্থীদের যে দুঃখ এইচএমসি’র ফলাফলে সেটা দূর হবে।’
এরফলে তারা পড়াশোনার মনযোগী হয়ে আগামীতে আরো ভাল ফল করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে লক্ষ্য ধরে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরীর প্রশিক্ষণ প্রদানে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিআরআই’র পক্ষ থেকে এবং ইয়াং বাংলার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের মধ্যেও সারাদেশে প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠপুস্তক বিতরণ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় তাঁর সরকার সারাদেশে ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ প্রদান করেছে। সেইসাথে চিকিৎসা খাতে আরো জনবল দরকার রয়েছে সেগুলো নেয়া হবে।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার হচ্ছে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর করে দেয়া হয়েছে। আরও ১ লাখ ঘর নির্মাণকাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।’
সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এ অধিবেশন করোনার সময়ে চলছে। যার জন্য হয়তো সব সংসদ সদস্যকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাসায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে তিনি জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে আসেননি। আমরা তার বক্তৃতা শুনতে পারলাম না এজন্য আমি দুঃখিত, কিন্তু তার ভেতর যে জনগণের প্রতি কল্যাণমূলক চিন্তা তার জন্য তাকে ধন্যবাদ। তবে, তিনি এলে ভালো হতো আমরা তার বক্তব্যও শুনতে পেতাম।’