ক্রাইম নিউজ মিডিয়া:
পার্সেল প্রতারণায় জড়িত দেশি ও বিদেশি প্রতারক চক্রের এগারজন সদস্যকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ বিপ্লব লস্কর, মোঃ সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, মোঃ নাজমুল হক রনি, মোসাঃ নুসরাত জাহান, CHIDI (নাইজেরিয়ান), EMMANUAEL (নাইজেরিয়ান), WILSON DA CONCEICAO (অ্যাঙ্গোলিয়ান), NGUEGNI PAPINI (ক্যামরুনিয়ান), JOHN (নাইজেরিয়ান)।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, ২৮টি মোবাইল ফোন, ১ টি কম্পিউটার, ৪৯১ টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বহি, ১৪১৫টি চেকের পাতা, ৩টি ওয়্যারলেস পকেট রাউটার, ১ টি প্রাইভেটকার, ৩ লক্ষ ৫০ হাজার জাল টাকা, ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার নগদ টাকা, প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রীনশট ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ২৬৩ টি সীম কার্ড উদ্ধার মূলে জব্দ করা হয়।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুর স্টেডিয়ামের গেইটের সামনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ উত্তোলনের নিমিত্তে প্রতারক চক্রের কতিপয় সদস্য একত্রিত হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের অপরাধের কৌশল সর্ম্পকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন শহরের সাধারণ মানুষের হোয়াটঅ্যাপ নম্বর, ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহপূর্বক ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভীসহ বিভিন্ন পরিচয় ধারণ করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ভিকটিমের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে উক্ত দেশি-বিদেশি প্রতারকরা দামি উপহার, স্বর্ণালংকার ও বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা/ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে লোভনীয় ছবি পাঠায়। পরে পার্সেল পাঠানোর নামে ভুয়া পার্সেলের ও রিসিটের ছবি পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতারকরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নম্বর হতে প্রতারিত ব্যক্তিকে কল দিয়ে নিজেকে কাস্টমস্ অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় যে, King Express Service এ আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। কাস্টমস হাউজ হতে তা ছাড়াতে ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। প্রতারকরা টাকা পরিশোধের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রতারিত ব্যক্তিকে পাঠায়। প্রতারিত ব্যক্তি বিদেশী বন্ধু কর্তৃক প্রেরিত পার্সেল পাওয়ার আশায় কলিং বিভাগের কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন করা বাংলাদেশি প্রতারকের দাবীকৃত টাকা ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠানো ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধের পর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী প্রতারক পুনরায় ফোন করে জানায় যে, তার বিদেশী বন্ধু কর্তৃক প্রেরিত পার্সেলে অবৈধ মালামাল রয়েছে। তাই পার্সেল ছাড়াতে আরো বেশি অংকের টাকা প্রয়োজন।
ডিবি প্রধান বলেন, উক্ত দাবীকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রতারকের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে দাবীকৃত টাকা পূনরায় পাঠালে ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরো বড় অংকের টাকা দাবী করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবীকৃত টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার সাথে সাথে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে ব্লক করে দেয়। নুসরাতের মতো অজ্ঞাতনামা অন্যান্য বাংলাদেশীদের সহায়তায় প্রতারকরা ভিকটিমদের কল করে প্রতারণা করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, প্রতারকরা প্রতারণায় ব্যবহারের জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য একাউন্ট খোলে। সে সকল একাউন্টের কার্ড এবং চেক বই নিজেদের হেফাজতে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা হতে টাকা উত্তোলন করে। উক্ত ব্যাংক একাউন্ট খোলা হতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভাগবাটোয়ারার সম্পূর্ণ কাজ গ্রেফতারকৃত মোঃ বিপ্লব লস্কর নিজে বিদেশী নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার বাংলাদেশী সহযোগীদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিদেশী সুন্দরী নারীর ছবি দিয়ে খোলা ফেসবুক একাউন্টের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়ে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক স্থাপনে সতর্ক থাকতে বলেন গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির মিরপুর মডেল থানা ও রূপনগর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকল সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান, বিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব আশরাফউল্লাহ, পিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।