শিগগিরই ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করবে রাশিয়া; পরিবর্তে এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বাজারগুলোকে এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাশিয়ার জ্বালানি, বিশেষ করে তেল ও কয়লার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ভাষণে বলেছেন তিনি।
তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন, ইউরোপে জ্বালানি পাঠানো বন্ধ করলে তা পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে; পাশাপাশি বলেছেন, প্রতিবছর যে পরিমাণ জ্বালানি, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া ইউরোপে সরবরাহ করে, নিকট ভবিষ্যতে তার আদর্শ বিকল্প উৎস খুঁজে পাবে না ইউরোপ।
বৃহস্পতিবারের ভাষণে পুতিন বলেন, ‘এখন আমাদের (জ্বালানির) বিকল্প বাজার খোঁজা জরুরি। এটি আমাদের মেনে নেওয়া উচিত যে, নিকট ভবিষ্যতেই পশ্চিমা দেশগুলোতে আমাদের জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে আনতে হবে।’
‘এ কারণে এখন বিশ্বের পূর্ব(এশিয়া) ও দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন আমাদের। সেসব দেশে জ্বালানির চাহিদা বেশ দ্রুতহারে বাড়ছে। তবে এই কাজটি আমাদের করতে হবে ধাপে ধাপে। প্রথম ধাপে ওইসব অঞ্চলে জ্বালানি রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুতে মনযোগ দিতে হবে।’
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপ ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপের বার্ষিক জ্বালানি গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে। এছাড়া রাশিয়ার কয়লা ও তেলের ওপরও ইউরোপের নির্ভরশীলতা অনেক।
সম্প্রতি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপ। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার তেল ও কয়লাও রয়েছে।
গ্যাসের ওপর যদিও এখনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি ইউরোপ, তবে ইউরোপের দেশসমূহের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধ করবে ইউরোপ।
এ সম্পর্কে ভাষণে পুতিন বলেন, ‘রাশিয়ার পরিবর্তে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি কেনার যে সিদ্ধান্ত ইউরোপ নিয়েছে, তার ফলে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিঃসন্দেহে সেই প্রভাব হবে খুবই যন্ত্রণাদায়ক; এবং তার প্রথম ভুক্তভোগী হবে ইউরোপ নিজেই।’
‘কারণ, রাশিয়া যে দামে ইউরোপে প্রতি বছর জ্বালানি সরবরাহ করে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের পক্ষে এই মুহুর্তে এই দামে জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব নয়। প্রাথমিকভাবে ইউরোপ জ্বালানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে, তবে যে দামে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গ্যাস কিনবে— তা অনেক বেশি। এতটাই বেশি, যে এ কারণে ইউরোপের সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান নেমে যাবে।’
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স