বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দেওয়া আমেরিকান জনগণ পছন্দ করবে না বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। খুনি রাশেদকে ফেরত দিলে ঢাকা-ওয়াশিংটনের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে একটি গেম চেঞ্জার হবে বলেও ব্লিঙ্কেনকে জানান মোমেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মোমেন-ব্লিঙ্কেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন খুনি রাশেদকে ফেরত চেয়ে এসব কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি তুলেছি। আমি বলেছি, খুনি রাশেদকে ফেরত পাঠানো হলে ৫০ বছর পূর্তিতে এটা একটা গেম চেঞ্জার হতে পারে। আমি ওনাদের বলেছি, এটা আপনার দেশের লোকের জন্য ভালো দেখায় না। আপনি একটা খুনিকে আপনার দেশে রেখেছেন। একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়াকে আমেরিকান জনগণ পছন্দ করবে না। এটা নিয়ে আপনাদের চিন্তা করা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে একবার ঠিক হয়েছিল তাকে পাঠানো হবে কিন্তু পাঠানো হয়নি। এ প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করা উচিত।
খুনি রাশেদ চৌধুরী ব্রাজিল থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০০৪ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে। কিন্তু ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখায় যুক্তরাষ্ট্র।
রাশেদকে ফেরত দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে দু’বার এবং ২০২০ সালে আরও একবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে ওয়াশিংটন।
ঢাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয় দেশটির বিচার বিভাগ। এর মধ্যেই দেশটির ক্ষমতার পালাবদল হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরও রাশেদকে ফেরানো নিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা এসে প্রথমবারের মতো ওই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। ১৯৯৮ সালে হত্যার দায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০০ সালে হাইকোর্টে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলে আসামিরা রিভিউ আপিল করেন। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রিভিউ আপিল খারিজ করা হয় এবং পরদিন ২৮ জানুয়ারি পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এর ১০ বছর পর ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ খুনির একজন আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান। বাকি পাঁচ খুনির মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। অন্য তিন জন শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন খান ও খন্দকার আব্দুর রশিদ কোথায় আছেন সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।