পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। দেশটি জানিয়েছে, বুধবার (৩০ মার্চ) থেকেই সামরিক অভিযান স্থগিত রাখবে তারা। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সৌদি জোট।
আসন্ন রোজার মাস উপলক্ষে যুদ্ধবিরতিতে যেতে জাতিসংঘ আহ্বান জানানোর পর মঙ্গলবার এই ঘোষণা দেয় দেশটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা ইয়েমেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখতে পবিত্র রমজান মাসে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে। তবে হুথি বিদ্রোহীরা অবশ্য সৌদির এই সিদ্ধান্তকে অর্থহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ইয়েমেনের অবরুদ্ধ বন্দরগুলো আগে পুরোপুরি খুলতে হবে।
এর আগে অসন্ন রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। আগামী ২ এপ্রিল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে রমজান মাস শুরু হতে পারে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার বিষয়ে সামরিক জোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।
সৌদির নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের মুখপাত্র বলেছেন, এই অস্ত্রবিরতিকে সফল করতে জোটের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা থাকবে। তারা রমজান মাসে শান্তি ও ইতিবাচক পরিস্থিতির পক্ষে। তারা চান, এই সংকটের সমাধান হোক।
অন্যদিকে ইরানপন্থি হুথি বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ইয়েমেনের বন্দরগুলো বন্ধ রেখেছে সৌদি জোট। সানার বিমানবন্দরও বন্ধ। হুথির মুখপাত্র বলেছেন, জোট যদি বন্দরগুলো থেকে অবরোধ না তোলে তাহলে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা অর্থহীন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। এছাড়া ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।