অভিযানরত রুশ সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে চেচনিয়ার বিদ্রোহীদের দমন অভিযানে যত সংখ্যক রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছিল, ইউক্রেন অভিযানের গত ২০ দিনে তার চেয়েও অধিক রুশ সেনা মৃত্যু বরণ করেছেন— উল্লেখ করে ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা বেঁচে থাকতে চান।’
‘আপনারা নিজেদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা বলেন, সেসব আমাদের কানে আসে। আমরা জানি, এই নিরর্থক যুদ্ধ সম্পর্কে আপনারা কী ভাবছেন। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় আপনারা যে কষ্ট পাচ্ছেন, তা ও আমরা বুঝি।’
মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরেই মূলত দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ২০০৮ সালে কিয়েভ এই আবেদন করার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে দ্বন্দ্বের তীব্রতা। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অভিযানের এ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক রুশ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, এ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর ১২ হাজারেরও বেশি সেনা মৃত্যুবরণ করেছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী অবশ্য এ বিষয়ে বরাবরই চুপ থেকেছে।
রুশ সেনাদের উদ্দেশে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি আপনারা আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন, ভদ্র-মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়, আপনাদের সঙ্গেও তা ই করা হবে…এমন আচরণ, যা কখনও আপনাদের সেনা কর্মকর্তারা আপনাদের সঙ্গে, কিংবা কারোর সঙ্গেই কখনও করেনি।’
‘আমরা আপনাদেরকে নিজেদের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে নিতে প্রস্তুত। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।’
সোমবার রাশিয়ার টেলিভিশন সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ওয়ানে সংবাদ পাঠ অনুষ্ঠান চলার সময় যুদ্ধবিরোধী প্ল্যাকার্ড তুলে ধরা রুশ সাংবাদিক মারিনা ওভসায়ানিকোভাকেও কৃতজ্ঞতা জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার যেসব নাগরিক প্রকৃত সত্যের পক্ষে আছেন, তাদের সবাইকে আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
এছাড়া, বেলারুশের গোমেল শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, এখন পর্যন্ত তা বেশ আশাব্যাঞ্জক বলেও সোমবারের ভাষণে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি।
সূত্র: বিবিসি