বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুল (৩২) গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেছিলেন। চাকরির সুবাদে তিনি ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই বসবাস করেন। মূল পেশার আড়ালে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন তিনি। এ পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতার কথা বলে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন শিমুল।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একাধিক বিয়েও করেছেন তিনি। এর মধ্যে এক নারীর সঙ্গে সম্প্রতি তার বিবাহ বিচ্ছেদে হয়। ডিভোর্স দেওয়ায় ক্ষোভে তিনি ওই নারীর সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পরে ওই ভুক্তভোগী র্যাব-১ এ অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি দল গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে তাকে আটক করে।
আটকের সময় তার কাছ থেকে ২টি ভুয়া সাংবাদিকের আইডি কার্ড, ২টি ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, ১১টি ভুয়া প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, ৩ প্রকার ভিজিটিং কার্ড, ১টি স্পাই ক্যামেরা, ৭টি এটিএম কার্ড, ৬টি চেক বই, ১টি পে-অর্ডার, ১টি বিয়ের হলফনামা, ১টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ৪টি পেন ড্রাইভ, ২টি মেমোরি কার্ড, ৬টি মোবাইল ফোন এবং ৪১টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
র্যাব-১ সূত্রে জানা যায়, শিমুল অষ্টম পাস হলেও তিনি নিজেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে পরিচয় দিতেন। পাশাপাশি তিনি ‘দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল’ নামে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদকর্মী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। এসব মিথ্যা পরিচয় দিয়ে স্থানীয় এলাকায় নানা প্রতারণা করে আসছিল সে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আব্দুল্লাহ আল-মোমেন।
লে.কর্নেল আব্দুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি র্যাব-১ এর কাছে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, তিন বছরে আগে শেখ শিমুল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ভিকটিম তাকে ডিভোর্স দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ শিমুল ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। পরে এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গতকাল আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল জানান, তিনি গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে বসবাস করে সালনা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও এলাকায় তিনি গ্র্যাজুয়েট হিসেবে পরিচয় দিতেন। এছাড়া সব থেকে বড় ভুয়া পরিচয়টি এলাকায় দিতেন সংবাদকর্মী হিসেবে। সাংবাদিক পরিচয়ে এলাকায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অংকের অর্থ তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সু-সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে আইনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, শেখ শিমুল ২০০৫ সালে বাগেরহাটে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে এক বছর সংসার করার পর, তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। তারপরে তিনি ২০১২ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও এক বছর পর দ্বিতীয় স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। গাজীপুরে চাকরি নেওয়ার পর তিনি ২০১৪ সালে আবার বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় সেখানে কর্মরত এক গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন তিনি। ভিকটিম তাকে কাবিননামা করার জন্য চাপ দিলে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। পরে ভিকটিম নানা কারণে আটকের সঙ্গে তিন বছর সংসার করেন। এক পর্যায়ে ভিকটিম জানতে পারেন, শেখ শিমুল এর আগেও একাধিক বিয়ে করছেন। এসব জানার পর ভিকটিম তাকে গত ডিসেম্বরে ডিভোর্স দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একান্ত মুহূর্তে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।