প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ১০ জনের নাম সার্চ কমিটির কাছে জমা দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
নেতারা বলেন, বিতর্কমুক্ত ও দলীয় পরিচয় নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হবে। নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, সভায় উপস্থিত সদস্যদের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার কারা হতে পারেন এমন যোগ্যতাসম্পন্ন পছন্দের ব্যক্তিদের নাম চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে দলীয় সভাপতির কথা মতো সভাপতিমণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্য পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেন।
সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ নেতাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে। তিনি বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকে প্রকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তার চাকরির মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত। অবশ্য নতুন দায়িত্ব পেলে বিশ্ব ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে আসতে কোনো বাধা নেই তার। শফিউল আলমকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তাই অনেকেই তার নাম তালিকায় রেখেছেন।
আরও পড়ুন : ৬০ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বসবে সার্চ কমিটি
পছন্দের তালিকায় আরও রয়েছেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকায়। সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালও রয়েছেন ওই তালিকায়।
বিতর্কমুক্ত ও দলীয় পরিচয় নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হবে। নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জমা দেওয়া তালিকায় তিনটি নাম ‘কমন’ রয়েছে বলে জানান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা। দুই প্রধান বিচারপতির নামও জমা দিয়েছেন কয়েকজন। অবশ্য দলীয় সভাপতির ইচ্ছা অনুযায়ী ওই বৈঠকে জমা দেওয়া নামগুলো নিয়ে আর আলোচনা হয়নি।
সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সব সদস্য জমা দেওয়া নামগুলো যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটির কাছে জমা দিতে অনুরোধ করেন দলীয় সভাপতিকে। আগামী বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের ১০টি নাম পাঠাবে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া ওই সভা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। সভায় সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করা, বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নিরবচ্ছিনভাবে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করতে বলেন তিনি।
পছন্দের তালিকায় আরও রয়েছেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকায়। সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালও রয়েছেন ওই তালিকায়।
সভায় আট বিভাগে আওয়ামী লীগের যে আটটি টিম রয়েছে ওই টিমগুলোকে সফর শুরু করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়নি সেখানে তা সম্পন্নের কড়া নির্দেশনাও দেন তিনি।
সাংগঠনিক সফরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে এবং বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা জনগণকে জানানোর জন্য নেতাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, এটা তুলে ধরতে হবে। এ সময় জনগণকে স্মরণ করিয়ে বলতে হবে, ২০০১ সালে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর বিএনপি ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সব চেষ্টা করেছে। ওই দলের মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এত বড় বড় ছবক মানায় না।
সভাপতিমণ্ডলীর ওই সভায় নবনিযুক্ত সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সভায় তারা শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানান।