২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা-ভারতীয় সৈন্যদের সংঘাতে চীনের অন্তত ৪২ সৈন্যের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে অস্ট্রেলিয়ার দৈনিক দ্য ক্ল্যাক্সনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশি এ দুই দেশের সৈন্যদের সংঘাতে সেই সময় চীনের পক্ষ থেকে মাত্র চার সৈন্যের প্রাণহানির তথ্য স্বীকার করা হলেও আসলে প্রকৃত চিত্র তার ৯ গুণেরও বেশি।
গালওয়ান সংঘাত নিয়ে একদল সামাজিক মাধ্যম গবেষক প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান করেছেন। তাদের গবেষণার ফলের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদনে দ্য ক্ল্যাক্সন বলছে, ওই বছরের ১৫-১৬ জুন গালওয়ান নদীর দ্রুত বয়ে যাওয়া স্রোত পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় কমপক্ষে ৩৮ সৈন্য নিহত হয়েছেন। অন্ধকার এবং প্রায় শূন্য তাপমাত্রায় চীনা এই সৈন্যরা নদী পার হয়ে যাওয়ার সময় তলিয়ে যান।
অস্ট্রেলীয় এই দৈনিক বলছে, চীন গালওয়ান উপত্যকার সংঘাতে চার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সেই চার সৈন্যের একজন ছিলেন জুনিয়র সার্জেন্ট ওয়াং ঝুওরান। গালওয়ান নদীতে তলিয়ে যাওয়া সৈন্যদের একজন তিনি।
চীনের স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবোর কয়েকজন ব্যবহারকারীর বরাত দিয়ে দ্য ক্ল্যাক্সন বলছে, ওই রাতে সার্জেন্ট ওয়াংয়ের সাথে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কমপক্ষে ৩৮ সৈন্য ভেসে যান। চীন মাত্র চার সৈন্য মারা গেছেন বলে ঘোষণা দেয়। নদীতে তলিয়ে যাওয়া সৈন্যদের মধ্যে কেবলমাত্র ওয়াংকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী গালওয়ান সংঘাতে পিএলএ’র জিনজিয়াং মিলিটারি কমান্ডের রেজিমেন্টাল কমান্ডার কি ফাবাও নিহত হন বলে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক গ্লোবাল টাইমস জানায়।
এতে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে গালওয়ান সীমান্ত সংঘর্ষে প্রাণ হারানো কি ফাবাও, চেন হোংজুনম চেন জিয়াংগ্রোং, জিয়াও সিউয়ান এবং ওয়াং ঝৌরানকে দেশের পক্ষ থেকে সম্মান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
তবে ভারত অবশ্য ওই সময় দাবি করেছিল যে, গালওয়ানে সংঘর্ষে চীনের কমপক্ষে ৩০ সেনা নিহত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত বেইজিং ওই সংঘর্ষে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা গত ১০ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কাশ্মীর সংলগ্ন পূর্ব লাদাখের ওই সংঘর্ষে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ৪৫ সদস্য নিহত হয়েছিলেন।
গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সৈন্যদের হাতাহাতি ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ব্যাপক বিবাদপূর্ণ ওই সীমান্তে ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্য নিহত হন। চিরবৈরী দুই প্রতিবেশি ভারত এবং চীন সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের অমীমাংসিত সীমান্ত নিয়ে ১৯৬২ সালে একবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
সূত্র: দ্য ক্ল্যাক্সন, এনডিটিভি, রয়টার্স।