কক্সবাজার বন বিভাগ ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশেই সরকারি ৩০ শতাংশ জমি দখল করে সমিতির ব্যানারে দোকান-ঘর উঠিয়ে ভোগ করছে একটি চক্র।
গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন ওই জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ব্যানারে দখল করা হয়েছে। যেখানে ১০টির বেশি দোকান থেকে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা ভাড়া আদায় হয়ে থাকে। প্রায় ২০ বছরে বেদখল অবস্থায় রয়েছে সরকারি ওই জমি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযানেও মিলেছে এমন অভিযোগের সত্যতা।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আদনান অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে আজ (সোমবার) ২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মধ্যে কক্সবাজারে গণপূর্ত বিভাগের জমি দখল করে দোকান ও বাড়ি নির্মাণের অভিযোগটি রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ কমিশন বরাবরে শিগগিরই বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।
দুদকের অভিযান সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কমচারীদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভাগের জমি দখল করে দোকান/বাড়ি নির্মাণ করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সরেজমিনে অভিযান পরিচালনাকালে টিম দেখতে পায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কমচারীরা দুটি সমিতির নামে জেলার বন বিভাগ ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাঝামাঝি এলাকায় গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্যবান জমি দখল করে দোকান ঘর তৈরি করেছে।
যদিও দখলকরা জমির একটি অংশ সরকারিভাবে লিজ নেওয়া দাবি করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপূর্তের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ দুদক থেকে যাচাই-বাছাই করতে এসেছিল। আমি বলতে চাই আমাদের সমিতি ও দোকানঘর সম্পূর্ণ বৈধ। আর এ জমি গণপূর্তে নয়, এটা সরকারি খাস জমি। ২০০০ সালে আমাদের সমিতির অনুকূলে ৭ শতাংশ লিজ নিয়েছিলাম। রাস্তা বাদ দিয়ে বর্তমান আমাদের দখলে ৫ শতাংশ রয়েছে। বাকি জমির বিষয়ে আমার জানা নেই।
বাকি ২৫ শতাংশ জমির বিষয়ে জানতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি স্বপন বাবুকে মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান দখলকরা জমি সম্পূর্ণভাবে গণপূর্তের এমন তথ্য দিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই জমি সম্পূর্ণ গণপূর্ত অধিদপ্তরের। ওখানে কোনো খাস জমি নেই। দুই সমিতি পক্ষ থেকে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আমরা বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জমি উদ্ধারের জন্যও জানিয়েছি। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে ৩০ নভেম্বর দখলকরা জমি উদ্ধারে কক্সবাজার সদর থানা জিডিও করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়েনি। আমরা চাই সরকারি জমি দখলমুক্ত হোক।
এদিকে দুদকের অভিযানকালে দোকান মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে মৌখিক ও লিখিত চুক্তির মাধ্যমে মাসিক ভাড়া দিয়ে দোকান পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে সমিতির নেতারা জানায়, তারা ওই জমি বরাদ্দের জন্য প্রায় ২০ বছর আগে আবেদন করেছেন। যা মন্ত্রণালয়ে পেন্ডিং অবস্থায় আছে। তাই তারা ওই জমির দখলে আছেন।