সকাল দশটা-দুপুর একটা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। প্রত্যাহারের সময় ঘনিয়ে আসলেও প্রার্থীদের মধ্যে একটা শঙ্কা ছিল নির্বাচন স্থগিত হওয়ার। শেষ পর্যন্ত এ রকম কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি। দুই পক্ষই হিসাব-নিকেশ করে প্রত্যাহার করেছে।
জেলা-বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ তাদের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে বরগুনার আলমগীর ও নেত্রকোণার কামরুন্নেছা দিনার সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে। দুই জনই এই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। ফলে ফোরাম সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থার আমির হোসেন বাহার। ফোরামের প্যানেলে সদস্য হিসেবে ছিলেন আনসারের রায়হানউদ্দিন ফকির। সার্ভিসেস সংস্থার এই কর্মকর্তা নিজ থেকে তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অন্য দিকে সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানার প্যানেল থেকে চারটি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে। রানার সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদে মনোনয়ন জমা ছিল। সেখান থেকে তিনি সহ-সভাপতি উত্তোলন করেছেন। ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এই সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার একের পর এক নাটকীয়তা করেই চলছেন। নির্বাচন কমিশন যখন প্রত্যাহার পত্র গ্রহণ করছিল তখন তার অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ পত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় ফেডারেশনের অফিস সহকারী।
কবির শিকদারের মনোনয়নপত্র বৈধতা ও পদত্যাগ পত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপস্থিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জোবায়েদুর রহমান রানা, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাত্র পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। যেটা দেয়ার কথা মনোনয়নপত্র জমার সময়। তার মনোনয়ন পত্রের সমর্থক স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। সঠিক সময়ে পদত্যাগপত্র না দেয়া এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির পরেও তিনি কিভাবে বৈধ প্রার্থী হন এটা বোধগম্য নয়। তিনি যদি পদত্যাগ করেই থাকেন তাহলে আবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান কিভাবে।’
২০ জানুয়ারি ছিল মনোনয়ন জমার দিন। সেই দিন অ্যাডহক কমিটি থেকে নির্বাচন করা প্রার্থীরা মনোনয়নের সঙ্গে পদত্যাগ পত্রও দিয়েছেন। স্বতন্ত্রভাবে সেই দিন মনোনয়ন জমা দেয়া কবির শিকদার তখন দেননি। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনে পদত্যাগ পত্রে দেখা যায় তার পদত্যাগ পত্র ১৯ জানুয়ারির।
ফেডারেশনগুলোর নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান কমিটির কর্মকর্তারা পুনরায় নির্বাচন করতে হলে সভাপতির কাছে পদত্যাগ করতে হয়। নির্বাচন কমিশনে জমা দিতেই হবে অথবা এনএসসিতে কপি দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। এবারের ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাচনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইনগত দুর্বলতার বিষয়গুলো পদে পদে ফুটে উঠেছে।
রানার প্যানেলে যুগ্ম সম্পাদক পদে আম্পায়ার রাসেলকে প্রত্যাহার করে কিছুটা নাটকীয়তা দেখিয়েছেন। রানার প্যানেলে দুই যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন রাসেল ও সুমন। দুই জনেরই সদস্য ও যুগ্ম সম্পাদক উভয় পদে মনোনয়ন ছিল। প্রত্যাহারের সময় সুমন সদস্য পদ থেকে ও রাসেল যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে প্রত্যাহার পত্র জমা দেন। রাসেল যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে সরে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই পদে একজন প্রার্থী কম দিয়েছে এই প্যানেল। ফোরাম সমর্থিত প্যানেলে দুই যুগ্ম সম্পাদক প্রার্থী চট্টগ্রামের দিদার ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলর সাইফুর রহমান সোহাগ। রাসেলের যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার হয়েছে সমঝোতার ভিত্তিতে। রানার প্যানেল থেকে নিট কনসার্নের জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লার সদস্য পদ প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি সহ-সভাপতি পদেই নির্বাচন করবেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে তিন জন প্রার্থী। চার সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে প্রার্থী সাত জন, দুই যুগ্ম সম্পাদকের বিপরীতে তিন জন, এক কোষাধ্যক্ষ পদের বিপরীতে দুই জন ও ১৬ সদস্যের বিপরীতে ২৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ৩১ জানুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ১০২ কাউন্সিলরের ভোটে ২৪ সদস্যের নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। প্রত্যাহার হওয়ার পরও নির্বাচন স্থগিতের চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকে।