সিএনএম প্রতিনিধিঃ
একজন নিরাপত্তারক্ষী, আরেকজন দিনমজুর। সাইবার দুনিয়ায় দু’জনের দোস্তি। যৌনতার প্রতি চারপাশের মানুষের আগ্রহ দেখে এ নিয়ে ব্যবসার ফন্দি আঁটেন তারা।
পরিকল্পনা মতো ব্লগসাইট তৈরি করে, সেখানে তরুণীদের আবেদনময়ী ছবি দিয়ে, যৌনতার আমন্ত্রণে আকর্ষণ করেন খদ্দেরদের। আগ্রহীদের কাছ থেকে বুকিং মানি নিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় নারীকণ্ঠে কথা বলে বিভিন্ন সার্ভিস সরবরাহের নামে টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র।
ব্লগসাইটের নাম ঢাকা ট্রাভেল এজেন্সি। ভেতরে প্রবেশ করতেই যৌনতার হাতছানি, পর্যটনের চিহ্নমাত্র নেই। যৌনতার প্রতি আকর্ষণ দেখে দেড় বছর আগে এই ব্যবসার শুরু করেন নিরাপত্তারক্ষী আমিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী দিনমজুর শহীদ ইসলাম।
ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে ব্লগসাইট তৈরি করে আমির। বুকিং মানি দেয়ার পর খদ্দেরদের সঙ্গে নারীকণ্ঠে কথা বলে বিভিন্ন সার্ভিসের নামে টাকা হাতিয়ে নিতো শহীদ। যদিও দেয়া হতো না কোনো সার্ভিসই।
গ্রেপ্তার দু’জনে জানায়, যৌনতার ফাঁদ পেতে প্রতিমাসে আয় হতো চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। নিরাপত্তারক্ষী আমিরুল ইসলাম জানায়,’ব্লক সাইট কিভাবে তৈরী করে ইউটিউবে সেটার টিউটোরিয়াল দেখে ব্লক সাইট তৈরী করি। এরপর আমি ২৬০টাকা সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করি। তখন কেউ কল করলে আমি ডাটাটা ওকে ট্রান্সফার করে দিতাম।’
দিনমজুর শহীদ ইসলাম জানায়,’আমি আগে থেকেই রিয়া আক্তার নামে আইডি চালাতাম। উনি আমাকে নাম্বারগুলো পাঠাতো, কিভাবে টাকা নিবা, কতো নিবা এগুলো সেগুলো আমি কাস্টমারের কাছে চাইতাম।’
দু’জনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস পর্যালোচনা করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো খদ্দেরের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ (গুলশান) উপ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন,’এরা আসলে একেবারেই প্রতারক শ্রেণির লোক। এরা আসলে কোন ব্রথেল চালায় না। মানষিকভাবে দেউলিয়া, নৈতিকভাবে দেউলিয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছিল।’
যৌনতাকে ঘিরে মূল্যবোধের বিচ্যুতি, ব্যবসা, প্রতারণা আর অপরাধের মাত্রা যেমন বাড়ছে, তেমনি জড়িয়ে পড়ছে ধারণার বাইরে থাকা শ্রেণি-পেশার লোকরাও- বলছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন,’যাদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে তারা কিন্তু থার্ডপার্টি। তারা কিন্তু এই ডিম্যান্ড সাপ্লাইয়ের কোথাও নেই। এর ফলে অনেকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
পারিবার ও সমাজ কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে নৈতিক বিচ্যুতি দিন দিন আরও বাড়বে বলে হুঁশিয়ার করেন বিশেষজ্ঞরা।