সিএনএমঃ
ঢাকার আশুলিয়া ও ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকা হতে বিপুল পরিমাণ জাল নোটসহ জাল নোট তৈরি চক্রের অন্যতম মূলহোতা সাইফুলসহ চক্রের ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০; জাল নোট তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার।
সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে, একটি প্রতারক চক্র প্রায় এক বছর যাবৎ জাল নোট তৈরি করে ঢাকা, গাজীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। এই চক্রটি জাল নোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। র্যাব উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
গতকাল (শুক্রবার) ০১ সেপ্টেম্বর বিকাল এবং রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জাল নোট তৈরী চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোঃ সাইফুল ইসলাম (২২), পিতা-মোঃ আলী মিয়া, সাং-কান্দিগাঁও চড়ারপাড়, থানা-সুনামগঞ্জ, জেলা-সুনামগঞ্জ, তার অন্যান্য সহযোগী ২। মোঃ শাহিন খান (২৪), পিতা-মোঃ মোতাহার খান, সাং-রাজাপুর, থানা-উজিরপুর, জেলা-বরিশাল, ৩। মোঃ রনু মিয়া (৩৫), পিতা-মৃত শহিদুল ইসলাম, সাং-বাশারুক, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ৪। মোঃ আল-আমিন শেখ (২৫), পিতা-মোঃ আব্দুস সালাম শেখ, সাং-ধানগড়া, থানা-রায়গঞ্জ, জেলা-সিরাজগঞ্জ ও ৫। মোঃ লাজু আহম্মেদ (২৭), পিতা-মোঃ আবু হানিফ, সাং-দক্ষিণ সুন্দর খাতা, থানা-ডিমলা, জেলা-নীলফামারী’দেরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিকট হতে ৪৫,৫০,৮০০/- (পয়তাল্লিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার আটশত) টাকার মূল্যমানের জাল নোট (যার মধ্যে ১০০০, ৫০০ ও ২০০ টাকা সমমানের জাল নোট রয়েছে), ০১টি ল্যাপটপ, ০২টি প্রিন্টার, ৬ বোতল স্পীরিট, ০৯টি টোনার ও কার্টিজ, ০২টি স্টীলের স্কেল, ০১টি টিউব গাম, ০১টি প্রিন্টার ক্যাবল, ০২টি এন্টি কাটার, ০১টি কেচিসহ জালনোট তৈরির বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জাল নোট তৈরি ও বিক্রয় সংক্রান্ত নি¤œবর্ণিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা পরষ্পর যোগসাজশে প্রায় এক বছর যাবৎ জাল নোট তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে জাল নোট বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রæপ থেকে জাল নোট তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হয়। চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত সাইফুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রæপের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত অপর সদস্যদের সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইফুল এর নেতৃত্বে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় তারা জাল নোটের ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রæপ খুলে এবং সেখানে তারা জাল নোট তৈরি/ব্যবসার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করে। এই ম্যাসেঞ্জার গ্রæপের এ্যাডমিন হিসেবে শাহিন কাজ করতো বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত সাইফুল জাল নোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় সে নিজেই এই চক্রটি পরিচালনা করতো। সাইফুল জাল নোট প্রিন্টিং করে রনু মিয়াকে প্রদান করতো এবং রনু চক্রের অপর সদস্য গ্রেফতারকৃত আল-আমিন ও লাজুকে সাথে নিয়ে জাল নোট কাটিং ও বান্ডিল করতো। যখন জাল নোটের ব্যবসা রমরমা থাকে তখন চক্রটি দৈনিক ২-৩ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করত বলে জানা যায়। তারা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতো। উক্ত চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকা, গাজীপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করতো। তারা প্রতি ০১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতো। তারা অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানীর পশুর হাট উপলক্ষ্যে বিপুল পরিমান জাল নোট ছাপিয়ে ছিল বলে তথ্য প্রদান করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। এ পর্যন্ত চক্রটি বিভিন্ন সময়ে প্রায় ০৩ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত সাইফুল ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা এলাকার একটি সুয়েটার তৈরীর গার্মেন্টস্ এ কাজ করত। উক্ত পেশার আড়ালে সে নিজের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপে ইউটিউব ও গুগলের মাধ্যমে জাল নোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। পরবর্তীতে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর বিভিন্ন গ্রæপের মাধ্যমে তার অন্যান্য সহযোগীদের সাথে পরিচয় হলে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় তাদের সাথে জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের একটি চক্র গড়ে তোলে। অতঃপর সাইফুল জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে এবং সে নিজে জাল নোট ডিজাইন এবং প্রিন্টিং এর কাজ করত। সাইফুল প্রায় এক বছর যাবৎ চক্রটি পরিচালনা করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত শাহিন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি সে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় এ ব্যবসায় যুক্ত হয়। সে চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত সাইফুল এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত রনু মিয়া ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরবর্তীতে সে গাজীপুর জেলার কাশেমপুর এলাকায় ডিমের ব্যবসা শুরুকরে উক্ত ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ায় স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চক্রটির সাথে যুক্ত হয়। সে চক্রের মূলহোতা সাইফুল এর সহযোগি হিসেবে কাজ করতো। সে জাল নোট প্রিন্ট করার সেগুলো সংগ্রহ করে কাটিং এবং বান্ডেল করে পরবর্তীতে তাদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ এর মাধ্যমে নির্বাচিত বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের নিকট সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আল-আমিন স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি সে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি সুয়েটার তৈরীর গার্মেন্টস্ এ কাজ করতো। স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাল নোট ক্রয়-বিক্রয়ের পেইজ ও গ্রুপে নিজেকে যুক্ত করে। আল-আমিন তাদের ম্যাসেঞ্জার/গ্রুপ এর মাধ্যমে নির্বাচিত বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের নিকট জাল নোট সরবরাহ করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও আল-আমিন এর বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত লাজু ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি সুয়েটার তৈরীর গার্মেন্টস্ এ কাজ করে। সেখানে একই গার্মেন্টস্ কাজ করার সুবাদে আল-আমিনের তার পরিচয় হয় এবং আল-আমিনের মাধ্যমে সেস্বল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় উক্ত চক্রটির সাথে জাড়িত হয়। লাজু ও আল-আমিন তাদের ম্যাসেঞ্জার/গ্রুপ এর মাধ্যমে নির্বাচিত বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের নিকট জাল নোট সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।