সিএনএম (যশোর) ;

সড়ক ও জনপথ যশোর সার্কেল অফিসে দিনের পর দিন একটি আজব ঘটনা ঘটে চলেছে।
অফিসের পিওন থেকে শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পর্যন্ত সবাই জানলেও অজ্ঞাত কারণে প্রতিকার নেই। একজন উপ সহকারী প্রকৌশলী অফিস না করেও ৪০ হাজার টাকার উপরে সরকারি বেতন ভাতা তুলে নিচ্ছেন।
সরকারি চাকরি বিধি ভুলুণ্ঠিত করে তিনি গত এক বছরেরও বেশি সময়ে এই অফিস ফাঁকির নজির গড়েছেন। মাসে ৩/৪ তিন, আর সপ্তাহে বড় জোর একদিন তিনি অফিস করেন। কোনো সপ্তাহে একদিনও অফিস করেননি এমন নজির গড়েও আছেন বহাল তবিয়তে। ওই উপ সহকারী প্রকৌশলীর অফিস ফাঁকির পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সড়ক বিভাগের অন্য স্টাফদের মধ্যে।
সড়ক যশোর সার্কেল অফিসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমীন সুলতানা বছর দেড়েক আগে যশোর জেলা অফিস থেকে বদলি হয়ে সড়কের সার্কেল অফিসে আসেন। কিন্তু সার্কেল অফিসে যোগদান করার পর থেকে তিনি সরকারি চাকরি বিধি ভুলুণ্ঠিত করে অফিস ফাঁকি দিয়ে চলেছেন। একই অফিসে কর্মরত তার উপসহকারী প্রকৌশলী স্বামী আল ইমরান উপরের অফিসারদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়ে যথেচ্ছা করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ। সার্কেল অফিসের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এই অফিস ফাঁকির বিষয়টি জানলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সড়ক ও জনপথের অন্য স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
নজীরবিহীন অফিস ফাঁকির বিষয়ে একাধিক সূত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত তিন সপ্তাহ খোঁজ খবর নেন এই প্রতিবেদক। দেখা যায় ওই তিন সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন অফিস করেছেন নাজমীন সুলতানা। গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর একদিনও অফিসে আসেননি বলে তথ্য মিলেছে। তার আগের সপ্তাহে একদিন অফিসে দেখতে পান সহকর্মীরা। তাও অল্প সময়ের জন্য। এছাড়া যে দিন সরকারি অফিস সময় সকাল ৮ টায় করা হয় সেই প্রথম দিনেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। সরকারি বিধি না মেনেও কোনো বাধা ছাড়াই তিনি বেতন ভাতা তুলছেন নিয়মিত এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। দৈনিক গ্রামের কাগজের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার অফিস ফাঁকির চিত্র। এই কামরার এসি চালিয়ে বসে অফিস করতে দেখা যায় তার স্বামী উপ সহকারী প্রকৌশলী আল ইমরানকে। যদিও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এসি চালানোর উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে অফিস ফাঁকির অভিযোগ। তবে স্ত্রীর তুলনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক কম।
২০১৮ সালে চাকরি আইনে ৫৯ নাম্বার ধারা অনুযায়ী সরকারি চাকুরের কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিতির ব্যত্যয় ঘটলে তার বেতন কেটে নিতে পারেন কর্তৃপক্ষ। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার পর তার জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় কার্যধারা রজু এবং পরিচালনা করতে পারেন। এছাড়া তাকে নিম্ন পদে বা নিম্ন পদের বেতন স্কেলে অবনমিত করতে পারেন। এছাড়া বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ, এমনকি বরখাস্ত পর্যন্ত করতে পারেন ওই সরকারি চাকরি বিধি অনুসারে। কিন্তু নাজমীন সুলতানার বেলায় শোকজ পর্যন্ত করা হচ্ছে না বলেও তথ্য মিলেছে খোদ ওই অফিস সূত্র থেকে। এ ব্যাপারে দ্রুত নাজমীন সুলতানার বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকির বিষয়টি আমলে এনে তদন্তের দাবি উঠেছে। কাজ না করেই সরকারি বেতন ভাতা তুলে নেয়ার বিষয়টিরও তদন্তের আওতায় আনার দাবি উঠেছে।
সড়ক বিভাগ যশোর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমেদ শরীফ সজীবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, নাজমীন সুলতানার অফিস ফাঁকির যে অভিযোগ এসেছে সে ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নেবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এমনটি কেন হচ্ছে এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী অফিস করবেন না এটি সঠিক এবং বিধিসিদ্ধ নয়। অফিস না করে বেতনভাতা তুলবেন এটা চলতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে তিনি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করবেন বলেও জানিয়েছেন।