‘বাবা আমার সব শেষ হইয়া গেছে। এখন আর আমাকে সে বাবা বলে ডাকবে না, জেলাখানায় দেখতে যাবে না। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ডিফেন্সে চাকরি করাব। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হয়ে আবার দুঃস্বপ্ন হলো।’
কেঁদে কেঁদে এভাবে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী রমজানুল ইমলাম রনির (২০) বাবা আকরাম হোসেন আঙ্গুর।
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন আঙ্গুর একটি বিচারাধীন খুনের মামলায় দীর্ঘদিন থেকে হাজতবাস করছেন। ছেলের মৃত্যুতে পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই।
এ ব্যাপারে আকরাম হোসেন বলেন, আদালত আমাকে শর্ত সাপেক্ষে মাত্র সাত দিনের জামিন দিয়েছেন। এরপর আমাকে আবারও জেলখানায় যেতে হবে। তখন এই পরিবারের খোঁজ কে নেবে? কে এই পরিবারের সব সদস্যের ভরণ-পোষণ করবে? এখন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন আমার ছোট ছেলে তারিকুল ইসলাম রকি। আমার রকির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটা চাকরি ভিক্ষা চাই।
আরও পড়ুন : সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রনির মৃত্যুতে শেরপুরে শোকের ছায়া
রনির মামা রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, রনির বাবা একটি মামলার আসামি। এই পরিবারের সব দায়িত্ব ছিল রনির কাঁধে। তার পাঠানো টাকা দিয়েই তিন ভাই-বোনের লেখাপড়াসহ সাংসারিক খরচ চলত। নিহত রনির ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম রকি এবার এইচএসসি পাস করেছে। ছোট দুই বোন আশামণি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে এবং আঁখিমণি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আজ একটি দুর্ঘটনা পরিবারের সব আলো নিভিয়ে দিল।
রনির চাচা জামান মিয়া জানান, রনি সব সময় আমার কাছে ফোন করে পরিবারের সবার খোঁজ নিত। আমার ভাতিজা রনি একজন ভালো মনের মানুষ ছিল। এলাকার সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে রনি ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে চেয়েছিল। আমরা না করায় সে আসেনি। আমাদের রনি ঠিকই তার বাড়িতে আসল, তবে লাশ হয়ে, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন : ‘ভাইয়ার মরদেহ আনতেও দিতে হয়েছে টাকা’
চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও আমাদের গ্রামের সন্তান রনির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি সব সময় তার পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারের জন্য যতটুকু করা প্রয়োজন আমি তার সবটুকু করব।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. জাবেদ হোসেন জানান, সরকারি দায়িত্ব পালনকালে মৃত ফায়ার ফাইটার রনির পরিবারকে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ৫০ হাজার টাকা অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনে এই পরিবার যেন আরও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।