সিএনএম ২৪ডটকমঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রেখে শিশুদের জীবনকে আলোকিত ও সুন্দর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবক শিক্ষক এবং সমাজের যারা বিশিষ্ট জন সকলের প্রতি আমি অনুরোধ করবো- শিশুদের প্রতি কোন ধরনের অত্যাচার বা প্রতিহিংসামূলক কাজ যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের হাত থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন এবং জনগণের প্রতিনিধি তাঁদের সবাইকেই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
‘আজকের শিশু আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যা কিছু আমরা করছি তা আগামীর শিশুদের জন্যই করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা অর্জন করেছে সেখানেই থেমে থাকলে চলবেনা আরো এগিয়ে গিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য । যে স্বপ্নটা একদিন জাতির পিতা দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার এমনভাবে দেশ পরিচালনা করছে যাতে তিনি বা তাঁর সরকার ক্ষমতায় না থাকলেও ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তাঁরা যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বা বড় বৈজ্ঞানিক হবে বা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসবে কাজেই সেভাবেই যেন শিশুরা নিজেদের গড়তে পারে সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিন্ াশিশুদের উদ্দেশে বলেন, ছ্ট্টো সোনামনিদের আমি বলবো তোমরা পড়াশোনা কর, তোমরা অভিভাবকের কথা শোনো এবং ভাল থাকো এবং তোমাদের জন্য যতটুকু যা করার সেটা আমরা করে যাবো। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন কাজেই এই স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে এবং ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন।
দ্বিতীয় শ্রেনীর ছোট্ট ছাত্র স্বপ্নীল বিশ^াস বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চেও ভাষণটি পরিবেশন করে এবং অপর শিশু ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী আনুসুয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের সকল শিশুদের পক্ষে তৃতীয় শ্রেনীর শিশু সাফওয়ান এবং চতুর্থ শ্রেনীর রুবাবা জামান বক্তৃতা করেন।
পরে শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছোট্ট সোনামনিদের কাছে এটাই চাই তোমরা লেখাপড়া শিখে তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করবে।
চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই সকলে স্কুলে যেতে পারবে। লেখাপড়া করতে পারবে।’
তিনি বলেন, তোমরা যাতে খেলাধূলা করতে পারো সেজন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় আমি একটা করে মিনি ষ্টেডিয়াম করে দিচ্ছি । কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং স্কুল –কলেজে ছেলে-মেয়েরা সেখানে যেন খেলাধূলা করতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।
সারাক্ষণ ‘পড়’ ‘পড়’ বললে কারোরই ভাল লাগেনা। কাজেই লেখাপড়াও সঙ্গে খেলাধূলা ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের প্রতিপাদ্য বঙ্গবন্ধু জন্মদিন শিশুর জীবন কর রঙ্গিন, সেই প্রতিপাদ্যের আলোকেই শিশুর জীবনকে আমরা আরো রঙ্গিন এবং স্বার্থক করে গড়ে তুলতে চাই।
জাতির পিতার করে যাওয়া শিশু অধিকার আইন, তাঁর সরকারের করে দেয়া প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনসহ শিশুদের বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতীয় শিশু শ্রম নীতিও প্রবর্তন করেছি যাতে শিশুরা এমন কোন কাজ না করে যাতে পরবর্তী জীবনে তাঁদের ক্ষতি হতে পারে।
তাঁর সরকার পারিবারিক সহিংসতা থেকে শিশুদের রক্ষা এবং নিরাপদ শিশু খাদ্য নিশ্চিত করতেও আইন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে তোমাদের সুরক্ষার সব রকম বন্দোবস্ত আমরা করে দিচ্ছি।
‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫’ আমরা প্রণয়ন করেছি যাতে শিশুর ওপর কোন অত্যাচার নির্যাতন না হয় ।
শিশু-কিশোরদের সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাদের ন্যায় ও সত্যের পথে চলারও পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সেই সঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পথে চলবে, তাহলেই জীবনে বড় হতে পারবে। জীবনটাকে উন্নত করতে পারবে। বাবা-মায়ের মুখও উজ্জ্বল হবে।
লেখাপড়া ও নৈতিক চর্চার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছোট্ট সোনামনিরা, আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই, তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, লেখাপড়া শেখো।
তিনি বলেন, আমি জানি করোনার কারণে এখন স্কুল বন্ধ। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। এটা অত্যন্ত কষ্টের। তারপরও আমি বলবো, তোমরা ছোট্ট সোনামনিরা, তোমরা ঘরে বসে লেখাপড়া করো এবং সেই সঙ্গে খেলাধুলাও করবে। খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা এগুলো একান্তভাবে অপরিহার্য। তোমরাই তো ভবিষ্যৎ, তোমরাই এদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।