হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার শুধু ভারতেই অঢেল সম্পত্তি করেননি, তিনি কানাডা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও টাকা পাচার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পিকে হালদারের পেছনে কোনো রাঘববোয়াল রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও পিকে হালদার ইঙ্গিত দিয়েছেন, টাকা পাচারের সঙ্গে তার পেছনে অনেক রাঘববোয়াল রয়েছে। গত সোমবার ইডির তত্ত্বাবধানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফেরার পথে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। টাকা পাচারের সঙ্গে রাঘববোয়ালদের নাম বলারও ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদারের পেছনে বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন মন্ত্রী আছেন, যার সঙ্গে পিকে হালদারের দীর্ঘদিনের সখ্য রয়েছে। ওই মন্ত্রীর সঙ্গে পিকে হালদারের সখ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেন বাংলাদেশে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিক। ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে বসে পিকে হালদারের সঙ্গে তারা বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তিও করেন। এসব অনৈতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা রয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তবে তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই দুজন ছাড়া আরও কয়েকজন পিকে হালদারের ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে অধিকতর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দুদক।
পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের কাহিনি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের সন্দেহ হলেও সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার পেছনে দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর সায় ছিল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। কারা এই ব্যবসায়ীÑ সে সম্পর্কে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা মুখ না খুললেও তারা আভাস দিয়েছেন, এরা অনেক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন। তারা অনেক ক্ষমতাধর।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মইনুদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। তদন্তে বেরিয়ে এলে নিশ্চয়ই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে, এই অর্থ পাচারের সঙ্গে কোনো রাঘববোয়াল জড়িত আছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাবেক মহাপরিচালক আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকে। টাকাপাচারের বিষয়টি এই ইউনিট উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। পিকে হালদারের পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগতে পারেÑ এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা একটা লম্বা প্রসেস। অনেক সময় লাগতে পারে।