রাজধানী থেকে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে প্রবেশের আগেই আব্দুল্লাহপুরে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের পিলারে সাঁটানো হয়েছে বিশাল একটি ব্যানার। ওই ব্যানারে বড় আকারে যার ছবি ছাপা হয়েছে, তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। এই নেতার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নানা অভিযোগ উঠলেও নগরজুড়ে শোভা পাচ্ছে তার বড় বড় ছবি। একই ব্যানারে লেখা- ‘মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’।
গাজীপুরের জয়দেবপুর রেললাইনের পাশের একটি বহুতল ভবনের ওপরও দেখা গেছে একটি বিশাল বিলবোর্ড। ওই বিলবোর্ডে লেখা আছে কাজী বদরুল আলম মনিনের নাম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের পদ হারানোর পর এই পদে প্রার্থী তিনি। ওই বিলবোর্ডে বড় ছবি সাঁটানো হয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অধুনালুপ্ত টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খানের। ওই ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের ছবি ছোট আকারে থাকলেও আজমত উল্লাহ খানের ছবি মনিরের চেয়েও বেশ বড়।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের ছোট-বড় কোনো অনুষ্ঠানেই বদরুল আলম মনিরের খুব একটা দেখা মেলে না। বিভিন্ন পদপদবি দাবি করে তার মতো এমন ছোট-বড় নেতাকর্মীর ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে গাজীপুর মহানগর। সড়ক, মহাসড়ক, পাড়া-মহল্লা ও অলিগলি, বাসের পেছনে, রিকশার পেছনে দেখা মেলে বিভিন্ন নতুনধারার রাজনৈতিক কর্মীর ছবি। শুধু তাই নয়, ওই নেতারা গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর মাঠের আঙিনায় গাছের মধ্যেও ফেস্টুন লাগিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দোয়া চাইছেন। গাজীপুরে কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মাঠ-ঘাটে তাদের দেখা না গেলেও দেখা মেলে আকাশে। গাজীপুর মহানগর এমন লাখ লাখ বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
মঙ্গলবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর, গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, বোর্ডবাজার, গাছা, চেরাগ আলী, শিলমুন, টঙ্গী বাজার ও আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রায় এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা সড়ক-মহাসড়কের পাশে বিলবোর্ড টাঙিয়ে এবং নগরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার লাগিয়ে তাদের প্রার্থী হওয়ার আগাম জানান দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এসব প্রার্থীর পক্ষে নিজ নিজ সমর্থক ও এলাকার মানুষ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পোস্টার ছাপিয়ে দোয়া চাচ্ছে। তবে এ প্রচারণায় নেই বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের সামনের সারির কোনো নেতা।
মো. জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ পদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের আগাম প্রচারণায় নেমেছেন। এজন্য ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টার টাঙানোয় প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিতরাই এগিয়ে রয়েছেন।
মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। যিনি গত নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তার সমর্থনে দলীয় নেতাকর্মীরা নগরজুড়ে পোস্টার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন ‘রাসেল সরকারকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ স্লোগানে। এ ছাড়া এবার মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সামনের সারির কোনো প্রার্থী এখনও প্রচারণায় নামেননি। তবে তাদের পক্ষে দলীয় কর্মীরা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পোস্টার লাগাচ্ছেন নগরজুড়ে।
গত ১৯ নভেম্বর মেয়র পদ ও আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পর থেকে যারা মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে এবং প্রার্থী হিসেবে আগাম জানান দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কামরুল আহসান রাসেল অন্যতম। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তার পক্ষে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পোস্টার ও বিলবোর্ড দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন।
এ ব্যাপারে কামরুল আহসান সরকার রাসেল জানান, বিগত সময়েও আমি আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। এবারও আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। দল আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব। পারিবারিক ঐতিহ্য ও নিজের গ্রহণযোগ্যতায় জনগণের ভোটে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এভাবে বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর বৈধতার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণার জন্য আর জায়গা কোথায়। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই পোস্টার-ফেস্টুন টাঙিয়ে রাখছে।