চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক তানবীর হাসানকে মুঠোফোনে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেই শিক্ষক।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম রাজু মুন্সী। তিনি চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী।
সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি লিখেন, ৪ এপ্রিল দুপুুরে আমার মোবাইলে ফোন করে রাজু। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনমূলক হুমকি দেওয়ার সাথে আমার বিভাগে তালা দেওয়া এবং বিভাগে ভাঙচুর করবে বলেও আমাকে জানায়। এ বিষয়ে আমি আপনাদের নিকট সর্বোচ্চ সহযোগিতা আশা করছি।
এদিকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার একটি অডিও ক্লিপ হাতে এসেছে প্রতিবেদকের। যা আছে ওই কল রেকর্ডে-
শিক্ষক: তুমি সুপারিশ করছো বলতে? তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ কর্মী: আমার অ্যাপ্রোচ এর থেকে বাজে। আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন নাকি ভিসি ম্যামের কাছে? ফোন ধরাই দিবো?
শিক্ষক: কী?
ছাত্রলীগ কর্মী: আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন আমার বিরুদ্ধে?
শিক্ষক: না, বুঝি নাই তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ কর্মী: আমার কথা এর থেকে বাজে। অ্যাপ্রোচ! আপনি আমাকে চেনেন না। আমি… কথার চেয়ে হাত বেশি চলে আমার। আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছে? একটু রেকর্ডিং করে রাখেন না! আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছেন? কথা থেকে আমার হাত বেশি চলে তো!
শিক্ষক: তুমি কী বলতে চাইছো কিছুই বুঝি নাই।
ছাত্রলীগ কর্মী: আপনি তো কোনো কিছু বুঝবেন না। টিচার হয়ে গেছেন না, এখন কোনো কিছু বুঝবেন না তো! আমি দেখা করতেছি আপনার সাথে তখন সব বুঝবেন।
শিক্ষক: মানে কী দেখা করবা? কী বলতে চাইছো কিছুই বুঝি নাই। তুমি একটু স্পেসিফিক বলবা?
ছাত্রলীগ কর্মী: আপনাকে টিচার করা হইছে কী জন্য? আমাদের পোলাপানকে রক্ষা করার জন্য না? নাকি এগুলাকে খালি ধরে ধরে উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য?
শিক্ষক: উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য মানে কী? আর আমাকে তুমি টিচার বানাইছো? কাকে কী বলো? তোমার মাথামুথা ঠিক আছে?
ছাত্রলীগ কর্মী: আরে ফোন রাখেন মিয়া। আমি দেখা করতেছি আপনি কই?
শিক্ষক: আমি কোথায় তোমার জানার দরকার নাই। কারে কী বলতেছো? মাথা তোমার ঠিক আছে?
ছাত্রলীগ কর্মী: আরে আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার মাথা ঠিক নাই যে। টিচার হওয়ার আগে ঠ্যাং ধরে বসে থাকতেন। আর টিচার হয়ে ভুলে গেছেন।
ছাত্রলীগ কর্মী: কিছু না। আপনারে মারার জন্য সুপারি পাইছি, বুঝছেন না? ক্যাম্পাসে আসলে পিটাবো। আপনাকে পিটাইলে টাকা দিবে আমাকে। রেকর্ডিং করে এগুলা ভিসি ম্যামরে শুনায়েন। আবোল-তাবোল পোলাপানরে টিচার বানিয়ে রাখছে! আপনার ডিপার্টমেন্টে ভাঙচুর করবো এখন।
শিক্ষক: কী করবা আমার ডিপার্টমেন্টে?
ছাত্রলীগ কর্মী: ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাবো।
শিক্ষক: তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাবা কেন?
ছাত্রলীগ কর্মী: আমার ইচ্ছা হইছে তাই। উল্টাপাল্টা কথা বলছেন যে! আপনি কই? ডিপার্টমেন্টে থাকলে..’
অভিযোগ অকপটে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী রাজু মুন্সী। তিনি বলেন, সে টিচার হওয়ার আগে সারাদিন আমাদের পিছে পিছে ঘুরত। এখন টিচার হয়ে আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আর ওকে মারতে তার ক্যাম্পাসে আসা লাগবে না। তার বাসায় গিয়েই আমরা তাকে মারতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়র প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, এই ঘটনায় আমরা শিক্ষকের থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।