ঢাকা: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করতে সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।
বুধবার (৯ মার্চ) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, সম্পদের বণ্টন সমান হবে। ইসলাম ধর্মই প্রথম নারীর অধিকার দিয়েছে। কোনো ধর্মই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব নারীপুরুষ উভয়কেই পরিবর্তন করতে হবে। বৈষম্য আর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা। এই সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অনেক আইন করেছি। এগুলোর মনিটরিং প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করা হয়েছে। তারপরও ধর্ষণ কমেনি। আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষণ কমবে। একজন নারী সহিংসতার শিকার হলে, ধর্ষণের শিকার হলে এর সীমাহীন প্রভাব রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। সাইবার ক্রাইমের বিষয়টি নিয়েও আমাদের ভাবা দরকার।
আইনমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের যাত্রা ছিল অসাধারণ। বঙ্গবন্ধুই ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীর অধিকার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলেই আমরা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আমরা ইনকোয়ারি করছি। ধর্ষককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতা অগ্রগণ্য স্লোগানকে সামনে রেখে এই আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আয়োজনে জাতীয় মানবার কমিশন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে ন্যাশনাল ইনকোয়ারি প্রতিবেদন ২০২২ এর নির্বাহী সার-সংক্ষেপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় উঠে এসেছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রশমনের চ্যালেঞ্জগুলো হলো- পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও অসাম্য দৃষ্টিভঙ্গি; পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন অবক্ষয়; নারীর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রদানে অনীহা, আদালতে বিচারক সংকট ও বিচারের দীর্ঘসুত্রিতা, ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও যথাসময়ে পরীক্ষা সম্বন্ধে অজ্ঞতা।
এ বিষয়ে করণীয় হিসেবে গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে- সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে সুসংহত করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকেই অসাম্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা, শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের মতো অপরাধ বিষয়ে সচেতন করে তোলা, আইন সংশোধন, বিচারহীনতা এবং বিচারহীনতা দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ। বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব স্থাপন, প্রতি জেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগত সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুর সহায়তা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ ১২ টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন করণীয় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া স্বাভাবিক ডাক্তারের আয়ের তুলনায় একজন ফরেন্সিক ডাক্তারের আয় অনেক কম হওয়ায় অনেকেই ফরেন্সিক ডাক্তার হতে চান না বলেও তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। আর ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করার দাবিও জানানো হয় এই আয়োজন থেকে।