আজ থেকে আট বছর আগে আছিয়া আক্তারকে (ছদ্মনাম) বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদপুরে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র। সেখানে একটি পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বর্তমানে ওই তরুণীর বয়স ২০ বছর। এই আট বছরে সেখানে তাকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করার নানা কৌশল অবলম্বন করা হলেও সে ওই কাজে লিপ্ত না হওয়ায় তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। এই কয়েক বছর নির্যাতন সইতে সইতে একপর্যায়ে সম্প্রতি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। শিশু থেকে তরুণী পর্যন্ত গত আট বছর নানা ধকল ও নির্যাতন সইয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসেই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে গত ১০ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশে সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর ওই তরুণী গ্রামের বাড়ি চলে যায়। ১৫ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার মুগদা এলাকায় বাসা ভাড়া নিতে আসেন। এসময় মামলার বিবাদী মো. মোখলেছ, মোসাম্মৎ আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরী এবং তাদের সাথে আরজু বেগম নামে এক নারীর সাথে দেখা হয়। তারা আদালতে করা মামলাটি মিমাংসার জন্য মুগদার কুমিল্লা পাড়া আমতলার ১৭/২২ বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে ওই তিনজনের সঙ্গে যুক্ত হয় জুবায়ের উল্লা নামে আরও একজন। তারা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। মামলা তুলে না নিলে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে দেওয়া হবে। ওই তরুণী তখন সাফ জানিয়ে দেয় মামলা তুলবেন না তিনি। এসময় পাচারকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বেধম মারধর করে এসময় সাইফুল ইসলাম (৫৫), মো. জাভেল হোসেন পাপন (৪১), জুবায়ের উল্লা (৩৩) ও মো. মোখলেছ (৩৫) এই চারজনে মিলে ওই তরুণীকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ সময় আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরী ও আরজু বেগম ধর্ষণে সহযোগীতা করেন বলে মুগদা থানায় অভিযোগ করেন।
ওই তরুণী বলেন, সঙ্ঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর ওরা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে মুগদা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতাল গিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করেন। মুগদা থানার পুলিশ এসে ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সোমবার মগদা থানায় একটি অভিযোগ দেন। বর্তমানে মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি রাত ৮টার দিকে জানান।
ওই তরুণী বলেন, ধর্ষণকারীরা একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। তারা অনেক শিশু-কিশোরীকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেন। এপর্যন্ত তারা অনেককে সেখানে বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের এই চক্রের অন্যতম হলো আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরী। এই আঙ্গুরী প্রথমে কিশোরীদের ফুসলিয়ে বাসা থেকে বের করে আনেন। পরে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেন। ওই তরুণী আরও জানান, এই আট বছর আমার ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে তা আমাকে চিকিৎসা করালেই বোঝা যাবে। আমি অসামাজিক কাজে লিপ্ত না হওয়ায় আমার ওপর চলে নিযাতন। তিনি বলেন, আমার সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করেছে তারা। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।
মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ জামাল উদ্দীন বলেন, আমরা অভিযোগ নিয়েছি। তার কথা শুনেছি। তদন্ত করে মামলা রুজু হবে বলে তিনি জানান।