বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারত্ব জোরদার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয়পক্ষ। বিশেষ করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা গভীর করতে চায় ঢাকা ও ওয়াশিংটন।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম অংশীদারত্ব সংলাপ নিয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দুই বছর বিরতির পর বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকায় এটি বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর বার্ষিকীতে এ সংলাপ আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
সংলাপে উভয়পক্ষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমগ্র ধারার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছে। এতে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ‘জটিল প্রক্রিয়া’ : যুক্তরাষ্ট্র
নিরাপত্তা, উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা তুলে ধরে উভয়পক্ষ স্থায়ী অংশীদারত্বের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয়পক্ষ একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, আইপিএস বিষয়ে ঢাকার অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অর্থনৈতিক দিক বিবেচনার ওপর জোর দেয়। জবাবে ওয়াশিংটন জানায়, আইপিএস নিয়ে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
সংলাপে উভয়পক্ষ ইউক্রেন, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ ও উদ্বেগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও মতবিনিময় করে।
সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিকে জানান, গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকারের অঙ্গীকার বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারত্বের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জনগণের সব ধরনের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আরও পড়ুন : ঢাকার সঙ্গে দুটি চুক্তি করতে চায় ওয়াশিংটন
তিনি র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটনকে জানান, এর ফলে সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার লক্ষে ওয়াশিংটনের সঙ্গে অবাধ ও খোলামেলা আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশের ইচ্ছার কথা জানান। এ বিষয়ে অব্যাহত আলোচনার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন।
উভয়পক্ষ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিও তুলে ধরেছে।
এছাড়া আলোচনায় এসেছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থনের প্রশংসা করার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আন্ডার সেক্রেটারি রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।